সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য আজ ইট নিয়ে কিছু কথা !

ইট  ইংরেজি ভাষায় Brick বলে । ইমারত তৈরির একটি অতি আবশ্যকীয় ও মৌলিক উপাদানবিশেষ। মাটিকে আয়তঘনক আকারের ছাঁচে ঢেলে ভিজিয়ে কাচা ইট তৈরি হয, তারপর এক রোদে শুকানো হয়। কাচা ইটকে আগুনে পোড়ালে পাকা ইঁট তৈরি হ্য়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রোদে শুকানো বা আগুনে পোড়ানো ইট ব্যবহার হয়ে আসছে। যদিও ইট পাথরের মত দীর্ঘস্থায়ী এবং মজবুত নয়; তারপরও সহজলভ্যতা, অল্প খরচ এবং স্বল্প ওজনের জন্য এর জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার সর্বাধিক। ইট বানানোর সময় কিছু ইট বেশি পুড়ে যায় ও কেকের মত ফুলে উঠে এক ফোপা শক্ত কালচে খয়েরী আঁকা-বাঁকা আকৃতির ইট তৈরি করে, যাকে বলে ঝামা বা ঝামা ইট। ঝামা শক্ত ও এবরোখেবড়ো বলে ঘষামাজার কাজে ব্যবহৃত হয়।
নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ইট যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ভারবহনকারি দেয়াল, পার্টিশন দেয়াল ইত্যাদি তৈরিতে ইট কাজে লাগে। এছাড়া ইট দিয়ে খোয়া তৈরি করা হয়।
তৈরির প্রদ্ধতি অনুসারে ইটকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
সাধারণ ইট বা বাংলা ইটসিরামিক ইট বা মেশিনে বানানো ইটকংক্রিটের তৈরি ইট
সাধারণ ইট বা বাংলা ইট:ও
সাধারণ ইট পাঁচ ধরনের হয়-
প্রথম শ্রেণীর ইটদ্বিতীয় শ্রেণীর ইটতৃতীয় শ্রেণীর ইটঝামা ইট পিকেট ঝামা ইট।
১. প্রথম শ্রেণীর ইট বা উত্তম ইট এর বৈশিষ্ট্য:
প্রথম শেণীর ইট নিম্নলিখিতবৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণ করে
প্রথম শ্রেণীর ইট একই মাপের হয় এবং রংও একই রকম হয়।ভালোমত পোড়ানো হয়।হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে ধাতব শব্দ হয়।ইকটি ইট খাড়া অবস্থায় রেখে এর উপর অন্য একটি ইট দিয়ে এর মতো তৈরি করে ৩.২৮ ফুট বা ১ মিঃ উপর থেকে ফেললে উপরের ইটটি ভাঙ্গবে না।নখ দিয়ে বা চাবি দিয়ে ইটের গায়ে দাগ বসানো যাবে না।ইটের ধার ও কোণ গুলো সুক্ষ ও তীক্ষণো হলে বুঝতে হবে এটি ভালো ইট। ইটের পৃষ্ট মসৃন ও সমতল হলে এটি ভালো ইট।একটি প্রথম শ্রেণীর ইটের আকার ৯.৫”X ৪.৫” X ২.৭৫”।একটি প্রথম শ্রেণীর ইটকে ২৪ ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ইটটি তার ওজনের ১৫% পরিমাণ পানি শোষণ করে।ইটের ওজন ৩.৫ কেজির বেশী হবে না।
২. দ্বিতীয় শ্রেণীর ইট:
দ্বিতীয় শ্রেণীর ইট নিম্নলিখিতবৈশিষ্টসমূহ ধারণ করেঅনেকটা প্রথম শ্রেণীর মত, ভাল পোড়ানো থাকে তবে একটু বেশি পোড়ানো থাকে।দুটি ইট পরস্পর আঘাত করলে ধাতব শব্দ হয় না।২৪ ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে এর শুষ্ক ওজনের সর্বোচ্চ ২২% এর বেশি পানি শোষণ করবে না।ভেঙ্গে ফেলার শক্তি কমপক্ষে ৯০ kg/cm২ হওয়া উচিৎ।এর আকার আকৃতি এবং রং কিছুটা অসমান এবং ইটের তলা অমসৃণ থাকে।
৩. তৃতীয় শ্রেণীর ইট:
এই ধরণের ইট অনেকটা কম পোড়ানো থাকেসহজে ভেঙ্গে যায় এবং হালকা রংয়ের হয়ে থাকে।যখন দুটি ইট একে অপরকে আঘাত করে তখন দুর্বল শব্দ হয়।এর আকার আকৃতি খুবই অসমান থাকে।২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর ওজনের সর্বোচ্চ ২৫% এর বেশি পানি শোষণ করবে না।
৪. অধিক পোড়া বা ঝামা ইট: 
অধিক পোড়ানোর ফলে এই ইট ফাঁপা হয়ে যায় এবং এর আকার এতটাই বিকৃত হয় যে, সাধারণ নির্মাণ কাজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। এটা সাধারণত খোয়া তৈরিতে ব্যবহার করা হয় যা চুন কংক্রিটের ভিত্তি ও রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হয়।
কম পোড়া বা পিলা ইট:
 কম পোড়া ইটকে সাধারণত পিলা ইট বলে। এগুলো অর্ধেক পোড়া হয় এবং হলদেটে রঙের হয়। এসব ইটের কোন শক্তি থাকে না। তাই এগুলো সুরকি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
ইট ব্যবহারের সতর্কীকরণ নির্দেশিকা: 
দীর্ঘস্থায়ী নির্মাণ কাজে সব সময় প্রথম শ্রেণীর ইট ব্যবহার করা উচিৎ। পাকা কাজে অথবা বাড়ির প্রাচীর নির্মাণ কাজে বা অস্থায়ী শেড তৈরির কাজে ২য় ও ৩য় শ্রেণীর ইট ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফিল্ড বা সাইটে ইট পরীক্ষা:
 নিচের পরীক্ষাগুলোর সাহায্যে নির্মাণ স্থলে ভাল ইট শনাক্ত করা যেতে পারে। যেমন-
প্রথমে একটি ইট নিয়ে এর পিঠে বা তলাতে নখ দিয়ে আচড় দিয়ে হবে, যদি আচড় পড়ে তবে তা খারাপ ইট বলে বিবেচিত হবে, আর না পড়লে ভাল ইট।একটি ইট নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে হবে যদি ধাতব শব্দের সৃষ্টি হয় তবে ভাল ইট।দুটো ইট হাতে নিয়ে T এর মত একটি অপরটির উপর ধরে ১ মিটার উপর থেকে সমান মাটিতে ফেলতে হবে, ভাল ইট হলে উপরের ইটটি ভাঙ্গবে না একটি ইট নিয়ে তার গায়ে নখের আাঁচড় কাটার চেষ্টা করলে তাতে আচঁর পড়বে না । যদি আচর পড়ে তবে বুঝতে হবে ইটটি ভাল না । একটি পাত্রে যদি ইট ভিজানো হয় এবং তা বুদবুদ সহকারে বেশ পরিমান পানি শোষন করে নেয় এবং পানি ঘোলাটে হয় তবে এটি ভাল ইট নয় । ইট ভেঙ্গে টুকরো করা হলে যদি টুকরাগুলোর রং দেখতে একই রকম হয় তবে এ্টি ভাল ইট ।
ইটের ব্যবহার সাধারণত নিম্নরূপ:
যে কোন আকৃতির দেয়াল তৈরিতে।মেঝে বা ফ্লোর তৈরিতে।আর্চ ও কার্নিশ তৈরিতে।খোয়া তৈরিতে।সুরকি তৈরিতে যা সাধারণত চুন প্লাষ্টার বা চুন কংক্রিটে ব্যবহার হয়ে থাকে।
ইটের আকৃতি বা সাইজঃ
বাংলাদেশে পি.ডব্লিউ.ডি সিডিউল অনুযায়ী ইটের সাইজ সাধারণত ৯ ১/২ ইঞ্চি X ৪ ১/২ ইঞ্চি X ২ ৩/৪ ইঞ্চি বা (২৩৮ মিমি X ৭০ মিমি) মাপের বাংলা ইট ব্যবহৃত হয়। আরও অনেক আকৃতির ইট আছে তবে এই আকৃতির ইট সবচেয়ে সুবিধা জনক মর্টারসহ উক্ত সাইজ হয় ১০ ইঞ্চি X ৫ ইঞ্চি X ৩ ইঞ্চি (২৫০ মিমি X ১২৫ মিমি X ৭৫ মিমি)।
আমাদের দেশে সাধারনত ৯.৫” x ৪.৫” x ২.৭৫” সাইজের ইট, যা মিলি মিটারে ( 238 x 114 x 70 ) বাংলা ইট ব্যাবহার হয়ে থাকে, এই মান PWD এর সিডিউল অনুযায়ী। মসলা সহ ১০” x ৫” x ৩” ( 250 x 125 x 76 )
সিরামিক ইট:
এটি অতি উন্নতমানের প্রথম শ্রেণীর ইটের অন্তর্ভূক্ত। এই প্রকার ইট মেশিনে তৈরি করা হয় বলে আকার ও আকৃতি সঠিক ভাবে বজায় রাখা সম্ভব হয়। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গ্যাস অথবা বিদ্যুতের সাহায্যে পোড়ানোর ফলে এর রঙের সাম্যতা সর্বত্র বজায় থাকে। ফেয়ার ফেস ব্রিক ওয়ার্কে অর্থাৎ আস্তর করা হবে না এমন দেয়াল নির্মানে এই ইট ব্যবহার করা হয়। সিরামিক ইটে ৫৫% বালি, ৩০% অ্যালুমিনিয়াম, ৮য় আয়রণ অক্সাইড, ৫% ম্যাগনেসিয়া ও ১% জৈব পদার্থ থাকতে পারে।
ব্রিক ওয়ার্ক করা সাধারণত সিরামিক ইট দিয়ে এবং এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ রাজমিস্ত্রি দিয়ে কাজ করাতে হয়, (বিশেষ করে সিরামিক দিয়ে যারা আগে কা
জ করেছে) না হলে ফেয়ার ফেসের সৌন্দর্য নষ্ট হবার সম্ভবনা থাকে।
হলো ব্লক:
বাড়ী নির্মানের হলো ব্লক খুবই উপযোগী। হলো ব্লক ব্যবহারে নিম্নলিখিত সুবিদা পাওয়া যায়:
ক) ইটের গাঁথুনির ওজন ৪০ ভাগ কমায় যার ফলে সাশ্রয়ী ডিজাইন সম্ভব হয়।
খ) পরিবেশ বান্ধব।
গ) ঘরের আয়তন প্রতি ১০০ বর্গফুটে ৬-১০ বর্গফুট বৃদ্ধি পায়।
ঘ) দেয়ালে লোনা ধরে না ও জ্যাম হয় না।
ঙ) শব্দ, তাপ, আগুন ও আর্দ্রতা প্রতিরোধক।
চ) সহজে প্লাষ্টার করা যায় এবং এর পুরুত্ব সাধারণ ইটের চেয়ে অর্ধেক হয় (১২মি:মি:-৬মি:মি)
ছ) ইলেকট্রিক্যাল ও প্লাম্বিং এর কাজে সহায়ক।
আজ এখানেই বিদাই। সবার জন্য রইলো শুভ কামরা।

Comments

Popular posts from this blog

সিঁড়ি ‬(Stair) সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী

প্লাম্বিং (পাইপের কাজ)

জলছাদ কি ? কেন করবেন ? কিভাবে করবেন ... বিস্তারিত >>>>